দলিলের পাতা ছিড়া/দলিল না থাকলে আপনার করণীয় কি?

লেখক: ইসরাঈল খান তারিখ: ৭ অক্টোবর, ২০২৫

অনেক সময় দেখা যায়, দলিল নম্বর ও তারিখ থাকা সত্ত্বেও দলিল তল্লাশি দিলে বলা হয় — “বালাম বইয়ের পাতা ছেঁড়া” বা “দলিল পাওয়া যাচ্ছে না”।

এই অবস্থায় হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নিচে ধাপে ধাপে দেখানো হলো কীভাবে আপনি আইনগতভাবে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন এবং দলিল হারানোর ক্ষেত্রে বিকল্প দলিল বা আদালতের ডিক্রি সংগ্রহ করবেন।


🔹 প্রথম ধাপ: প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করুন

প্রথমে আপনার জমি সম্পর্কিত সকল প্রমাণ ও কাগজপত্র একত্র করুন:

  • দাগ নম্বর
  • খতিয়ান ও নামজারি কপি
  • খাজনা/দাখিলা রসিদ
  • দলিল নম্বর ও তারিখ

🔹 দ্বিতীয় ধাপ: অফিসে আবেদন জমা করুন

জেলা রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল নম্বর ও তারিখ উল্লেখ করে লিখিত আবেদন করুন।

আবেদন জমা দেওয়ার সময় অবশ্যই প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ (Received Copy) সংগ্রহ করুন এবং নিজের কপিতে সিল ও সই নিন — এটি পরবর্তীতে প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।


🔹 তৃতীয় ধাপ: দলিল না পেলে যা করবেন।

যদি অফিস জানায় যে দলিল পাওয়া যাচ্ছে না বা “পাতা ছেঁড়া”, তাহলে অবশ্যই লিখিতভাবে একটি ‘দলিল অনুপলব্ধতার সনদ’ (Non-Availability Certificate) চাইবেন।

মৌখিক জবাব কখনো গ্রহণ করবেন না। লিখিত সার্টিফিকেটই পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপের ভিত্তি।


🔹 অফিস লিখিত জবাব না দিলে কী করবেন?

  1. আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ সংরক্ষণ করুন।
  2. যদি লিখিত জবাব না পান, তাহলে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ (RTI) অনুযায়ী অফিসে লিখিতভাবে তথ্য চেয়ে আবেদন করুন।
  3. তারা বাধ্য থাকবে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে উত্তর দিতে। না দিলে আপনি তথ্য কমিশনে অভিযোগ করতে পারবেন।

📚 আপনার অধিকার সম্বন্ধে বিস্তারিত সকল আইন গুলো জানুন!

১️⃣ নিবন্ধন আইন, ১৯০৮ (Registration Act, 1908)

  • ধারা ৫৭(১): রেজিস্ট্রি অফিসের বই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত — যে কেউ দলিল অনুসন্ধান করতে পারেন।
  • ধারা ৫৭(২): অফিস আবেদন পেলে দলিলের সত্যায়িত কপি দিতে বাধ্য।
  • ধারা ৫৭(৫): দলিল না থাকলে অফিস লিখিতভাবে কারণ জানাতে বাধ্য।

২️⃣ নিবন্ধন বিধিমালা (Registration Rules)

  • Form-37 ব্যবহার করে দলিলের Certified Copy চাওয়া যায়।
  • অফিস আবেদন নিলে প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ দিতে বাধ্য।

৩️⃣ তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯

  • ধারা ৪(১): প্রত্যেক নাগরিক সরকারি অফিস থেকে তথ্য চাওয়ার অধিকার রাখেন।
  • ধারা ৬(১): আবেদন পেলে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য দিতে হবে।
  • ধারা ৬(৫): তথ্য না দিলে তথ্য কমিশনে অভিযোগ করা যাবে।

৪️⃣ সংবিধান (বাংলাদেশ সংবিধান, ১৯৭২)

  • অনুচ্ছেদ ৩১: আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার।
  • অনুচ্ছেদ ৪৪: মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য হাইকোর্টে রিট করার অধিকার।

⚖️ তথ্য না দিলে হাইকোর্টে রিট করবেন যেভাবে

  1. আইনজীবী নিয়োগ: হাইকোর্টে রিট করার জন্য একজন অভিজ্ঞ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিয়োগ করুন।
  2. রিটের ধরন: “Mandamus” রিট — অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তাকে তার আইনগত দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে।
  3. রিটে উল্লেখযোগ্য বিষয়:
    • আপনার নাম, ঠিকানা, দলিল নম্বর, তারিখ
    • রেসপন্ডেন্ট হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রার, জেলা রেজিস্ট্রার, IGR, ভূমি মন্ত্রণালয়
    • আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যাত বা উপেক্ষিত হওয়ার বিবরণ
    • প্রার্থনা (Prayer): দলিল যাচাই ও কপি প্রদানের নির্দেশ চাওয়া
  4. রিট ফাইল ও শুনানি: রিট পিটিশন দাখিলের পর আদালত রুল জারি করবে এবং পরবর্তী শুনানিতে নির্দেশ দেবে।

🏛️ আদালতের যে আদেশ দিতে পারে

  • অফিসকে দলিল অনুসন্ধান ও কপি দিতে নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।
  • পাতা ছেঁড়া থাকলে অন্য রেকর্ড (Volume Book, Microfilm, Digital Copy) থেকে তথ্য উদ্ধার করতে বলা হতে পারে।
  • অবহেলা প্রমাণিত হলে অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

📜 দলিল না পাওয়া গেলে সর্বশেষ করণীয় কি

যদি আদালত নিশ্চিত হয় দলিল আর পাওয়া যাবে না, তবে অফিসকে লিখিত সার্টিফিকেট দিতে বলা হবে — “এই দলিল অফিসে পাওয়া যায়নি বা নষ্ট হয়েছে।”

এরপর আপনি সিভিল কোর্টে Declaratory Suit করতে পারবেন (Specific Relief Act, 1877 – Section 42 অনুযায়ী)।

এখানে আপনি আদালতের কাছে ঘোষণা চাইবেন যে — আপনি বৈধ মালিক এবং মূল দলিল হারিয়ে গেছে। আদালত সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাই করে ডিক্রি দিলে, সেটি আপনার আসল দলিলের সমান কার্যকর হবে।


🔰 আর্টিকেলের সারসংক্ষেপ

  • অফিসের মৌখিক জবাবে থেমে যাবেন না — লিখিত নিন।
  • তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে জবাব চাইতে পারেন।
  • প্রয়োজনে হাইকোর্টে Mandamus রিট করুন।
  • দলিল চূড়ান্তভাবে না পাওয়া গেলে Declaratory Suit করে মালিকানা নিশ্চিত করুন।

➡️ মনে রাখবেন: আদালতের ঘোষণাপত্র (ডিক্রি) ভবিষ্যতে আপনার জমির মালিকানার বৈধ প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।

লেখক: ইসরাঈল খান

হোয়টসএপ নাম্বারঃ- 01811-811182


📢 এই আর্টিকেল টি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে নিচে থাকা ফেসবুক/টুইটার/whatsapp আইকনে ক্লিক করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

MD Rimon Khan

আসসালামু আলাইকুম, আমি, সার্ভেয়ার মোঃ রিমন খাঁন (B.Sc, M.Sc) সিভিল কোর্ট কমিশনার জেলা জজ আদালত, ঢাকা ব্যাবস্থাপক, ময়নামতি ল্যান্ড সার্ভে অফিস প্রশিক্ষণ পরিচালক, ময়নামতি ল্যান্ড সার্ভে এন্ড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট Mobile Imo & whats app: 01811-811182

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন